সত্তর বছরের বৃদ্ধ জাহের আলী ও তার ছেলেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে নির্মম নির্যাতন করে তার ৬২ বিঘা জমিসহ সর্বস্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী ফারজানার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাজানো প্রতারণার মামলায় ভুক্তভোগী ওই পরিবারটিকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক বাড়ি-ঘরসহ জমি লিখে নেন গাজী মোজাম্মেল দম্পতি।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় ১৪ মার্চ মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাসের আদালতে একটি মামলা হয়েছে। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চমহলে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে কারাগারে আছেন। এর মধ্যেই গতকাল দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হকের এমন বেআইনি কাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে রিমান্ডে নিয়ে বৃদ্ধ জাহের আলীর সর্বশেষ জমিটিও কমিশন বসিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। মামলার এজাহারে ১৩ দিন ডিবি অফিসে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন, জোরপূর্বক ৬২ বিঘা জমি লিখে নেয়ার মর্মস্পর্শী বর্ণনা উঠে এসেছে।
২০১৮ সালের মাঝের দিকে ঘটা এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গাজী মোজাম্মেল হক ও তার স্ত্রী ছাড়াও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রূপগঞ্জ থানার সাবেক ওসি, একজন ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর, একজন এএসআই ও কয়েকজন কনস্টেবল, সাবরেজিস্ট্রার, দলিল লেখক ও একজন ব্যাংক মানেজার।
এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ জাহের আলী। তিনি বলেন, ‘আমার প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি। এ জুলুমের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার চাই।’
তনে বিষয়টি অস্বীকার করে মামলার বিষয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক দাবি করে বলেন, ‘বেআইনি কিছু করিনি, পাওনা টাকা আদায়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।’
বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের নজরে এলে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘এর সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।’